সালাম সালাম হাজার সালাম’ বঙ্গবন্ধুর অনুরোধেই লেখা : ফজল-এ-খোদার স্ত্রী

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় সেরা ২০-এর মধ্যে ১২তম স্থানে ছিল ‘সালাম সালাম হাজার সালাম, সকল শহীদ স্মরণে’ গানটি। এর গীতিকার ফজল-এ-খোদা এবার শিল্পকলায় (সংগীত) গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হয়েছেন। গানটির বিষয়ে বলতে গিয়ে তার স্ত্রী মাহমুদা সুলতানা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অনুরোধেই লেখা হয়েছিল ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেশের ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে একুশে পদক তুলে দেন।

একুশে পদক গ্রহণের পর মাহমুদা সুলতানা বলেন, ‘এতদিন পর ফজল-এ-খোদাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আমার খুব ভালো লেগেছে।’

প্রধানমন্ত্রীকে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গান নিয়ে জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আমি তাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) গানটির বিষয়ে এই কথা বললাম যে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে সেটা লেখা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তা জানি।’ তিনি সবকিছু জানেন। তিনি লেখাপড়া করেন।”

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগেছে জানিয়ে মাহমুদা সুলতানা বলেন, ‘তিনি একজন ভালো মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আমার ছোট্ট একটি বই আজ তাকে উপহার দিয়েছি। আমি তাকে বললাম, সময় হলে এটি পড়বেন। আমার অনুরোধ।’

‘জবাবে তিনি বলেন, আমি এরইমধ্যে পড়েছি। আপনি এতো ভালো লিখেছেন, আমার চোখে পানি এসেছে। এ কথায় আমি সিম্পলি অভিভূত। আমি বললাম, আপনি পড়েছেন? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি পড়ে ফেলিছি, খুব ভালো লেগেছে,’ যোগ করেন মাহমুদা সুলতানা।

ফজল-এ-খোদাকে হারিয়ে একা হয়ে গেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমার জীবনে এখন একাকীত্ব। যদিও ছেলের কাছে আছি। আমার ছেলেরা খুব ভালো, আমাকে খুব যত্ন করে। তারপরেও একটা শূন্যতা, এটি থাকবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমার কষ্ট হচ্ছে, তিনি দেখে যেতে পারলেন না যে তিনি একুশে পদক পেয়েছেন।’

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ফজল-এ-খোদা একাধারে কবি, শিশু সাহিত্যিক, শিশু সংগঠক ও সম্পাদক। তিনি আমৃত্যু দেশের সব সাংস্কৃতিক ও মানবিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। ফজল-এ-খোদা তরুণ বয়সে চাকরি ছেড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। চাকরিতে অনুপস্থিত থাকা এবং মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তাকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি যুদ্ধ থেকে ফিরে বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেন। তিনি শিশু সংগঠন ‘শাপলা শালুকের আসর’-এর প্রতিষ্ঠাতা।

শিশু-কিশোরদের কাছে তিনি ‘মিতাভাই’ হিসেবে পরিচিত। শাপলা শালুক আসরের শিশুবিষয়ক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৫-এর ৩ অক্টোবর তিনি ‘বঙ্গবন্ধু বেতার কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুকে উপলক্ষ করে ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/পথের ধুলোয় লুটোবে’ গান রচনা করেন।

তার রচিত জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে ‘সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম, চলবে দিনরাত অবিরাম’, ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘শিল্পী আমি তাই কবিতা আমার ভালো লাগে’, ‘কলসি কাঁখে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, ‘মানুষের গান আমি শুনিয়ে যাবো’, ‘আমাদের শক্তি আমাদের মান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘প্রদীপের মতো রাত জেগে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম’, ‘মন রেখেছি আমি মনেরও আঙিনায়’, ‘বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে কোন বধূয়া চলে যায়’, ‘খোকনমণি রাগ করে না’, ‘ঢাকা শহর দেখতে এসে’, ‘প্রেমের আরেক নাম জীবন’, ‘ও মন চিনলি নারে’ প্রভৃতি। এরকম অসংখ্য গান লিখে ফজল-এ-খোদা বাংলা সংগীতের ভুবনকে সমৃদ্ধ করেছেন।

Share