২৫৮ আসনের ফল, আওয়ামীলীগ ১৮৯, আওয়ামী স্বতন্ত্র ৫৬

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৫৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮৯টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৫৬টি আসনে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সৈয়দ একরামুজ্জামান এবং সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হুছামুদ্দিন চৌধুরী জয় পেয়েছেন।

বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। বর্তমান সংসদে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ তকমা নিয়ে থাকা জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনেও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করেছিল। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে তারা জয় পায়নি।

১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ৬টি আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচন করে শরিকেরা জয় পেয়েছে দুটি আসনে। এ ছাড়া কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (হাতঘড়ি)।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেসরকারি ফলাফল না হওয়া আসনগুলোর মধ্যেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এরপর দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অবস্থান। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ হতে যাচ্ছে মূলত পুরোপুরি আওয়ামীলীগ নির্ভর একটি সংসদ।

গতকাল সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হয়। ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে গতকাল ভোট হয় ২৯৯টি আসনে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে রাতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম ফল ঘোষণা করছিলেন। তাঁর কাছ থেকে প্রতিটি আসনের পূর্ণাঙ্গ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু ফল ঘোষণা শেষ না করেই ভোররাতে তিনি তা বন্ধ করে চলে যান। পরে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও একে একে চলে যান। ফলে রাতে ভোটের ফলাফলের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়নি।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এবারের নির্বাচনে অংশ নেয় ২৮টি। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বেশ কিছু দল নির্বাচনে নেই। ভোটে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য না থাকায় আগেই পরিষ্কার ছিল, আওয়ামী লীগ বড় জয় পেতে যাচ্ছে।

বিএনপির বর্জনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে জয় পায় আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। এই ভোট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার যাতে সে রকম পরিস্থিতি না হয়, সে জন্য আগে থেকে সতর্ক ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণে তারা দলটির নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করে। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাইরে ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক, মিত্র এবং ঘনিষ্ঠ কিছু দলও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল।

গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী যাঁরা জয় পেয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬২ ভোট পেয়ে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এম নিজামুদ্দিন লস্কর পেয়েছেন ৮৬৯ ভোট।

জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক প্রমুখ এবারও জয়ী হয়েছেন।

সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবারও জয়ী হয়েছেন। টানা পঞ্চমবার জয় পেয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর।

প্রথমবারের মতো নির্বাচনে এসে বিজয়ী হয়েছেন আলোচিত প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চলচ্চিত্র তারকা ফেরদৌস আহমেদ।

Share