রাজশাহী প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি পুলিশ বক্স ও কয়েকটি দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের পুলিশ বক্সটি পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আগুনে পুলিশ বক্সের পাশে কয়েকটি দোকানঘরও পুড়ে যায়।
শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় সংঘর্ষ থামেনি। এখনো শিক্ষার্থী, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান নিয়ে আছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, পুলিশ বক্স ভবনটি অক্ষত থাকলেও ভেতরের ফ্যানসহ সব মালামাল পুড়ে গেছে। পুলিশ বক্সের পাশে ৮ থেকে ১০টি দোকানঘরও পুড়ে গেছে। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ক্যাম্পাস ও বিনোদপুর বাজারে মহাসড়ক দখলে রেখেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পুলিশ, র্যাব নিরস্ত্র করার কাজ করছিল। ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে অবস্থান নিয়ে আছেন। উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করছেন।
পরিস্থিতি সম্পর্কে মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। সবাইকে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’ পুলিশ বক্সে আগুনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের কাছে এ–জাতীয় কোনো তথ্য নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবেন। তিন ঘণ্টা পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এত সময় লাগছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানকার পরিবেশ–পরিস্থিতি বুঝে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।’
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালে সংঘর্ষে আহত ৩৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তি অব্যাহত আছে।
দুই দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা : সংঘর্ষের প্রায় চার ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। এ সময় মাইকে তিনি রবি ও সোমবার সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা দেওয়ার পর তোপের মুখে পড়েন তিনি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
হাতমাইকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘তোমাদের প্রতি অনুরোধ হলে ফিরে যাও। তোমাদের জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। রুমে যাও তোমরা। এ ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
বগুড়া থেকে যাত্রীবাহী বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। বাসে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে বাসের চালক ও সহকারীর কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে তাঁদের সঙ্গে আবার বাগ্বিতণ্ডা জড়ান ওই শিক্ষার্থী। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন।
একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া দেন। এর পর থেকে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিনোদপুর। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।