নয়াবার্তা প্রতিবেদক : টানা চার মাস ধরে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক কমছে। মূলত মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমে যাওয়ায় পুরো ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যায় প্রভাব পড়েছে। গত ডিসেম্বরে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ১১ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার, সেটা কমে জানুয়ারিতে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৬৩ লাখে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ২১ লাখ ৯০ হাজার। অপারেটররা বলছে, মুঠোফোন ইন্টারনেটের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গ্রাহক কমছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আজ বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট গ্রাহকের সর্বশেষ হিসাব দিয়েছে। তাতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পরিসংখ্যান রয়েছে। বিটিআরসির হিসাবে, সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার ব্যবহার করলেই কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য হন। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশের মোট ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৬৩ লাখ এবং ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি।
গত সেপ্টেম্বরে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ১৩ কোটি ২৬ লাখের বেশি। এর পর থেকে টানা চার মাস অর্থাৎ গত অক্টোবর থেকে ইন্টারনেট গ্রাহক কমছে। এই সময়ে মূলত মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহকই কমেছে। গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে আসছিল। সে সময় গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজারের বেশি। আগস্ট মাসের পর থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ৭ লাখের বেশি। তবে এই বৃদ্ধি মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ, এ সময়ে ধারাবাহিকভাবে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে সার্বিকভাবে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমছে উল্লেখ করে বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান বলেন, তিন দিনের ছোট ইন্টারনেট প্যাকেজ জনপ্রিয় ছিল। বিটিআরসির নতুন নির্দেশনায় তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক গ্রাহক সরে গেছেন বলে ধারণা করা হয়। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরও প্রভাব রয়েছে।
বিটিআরসি নির্দেশনায় গত ১৫ অক্টোবর থেকে মুঠোফোনের নতুন ডেটা প্যাকেজ চালু করেছে অপারেটরগুলো। এর পর থেকে প্যাকেজের সংখ্যা কমার পাশাপাশি ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদি প্যাকেজগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। চালু আছে ৭ ও ৩০ দিন মেয়াদিসহ সীমাহীন মেয়াদি (আনলিমিটেড) প্যাকেজ।
গ্রাহক কমার বিষয়ে আরেক মুঠোফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, দেশে গত কয়েক মাসে মুঠোফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। ইন্টারনেট প্যাকেজ সংখ্যা কমা ছাড়াও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শীত মৌসুমের প্রভাব, রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছে। তবে এ ধারা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা আরও কিছুদিন পর বোঝা যাবে।
এভাবে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সূচক বলে মনে করছেন এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভিত্তিক টেলিযোগাযোগ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান। তিনি আজ বলেন, এ থেকে বোঝা যায় নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের ব্যয় কমিয়েছে। সরকারের উচিত হবে এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। অপারেটরদের কাছ থেকে এলাকাভিত্তিক তথ্য নিয়ে দেখতে হবে কোথায় গ্রাহক কমছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।