অগ্রণী ব্যাংকের অভিনব জালিয়াতি : বন্ধকি জমির অস্তিত্ব না পেয়ে নামের মিলে অন্যের জমি নিলাম!

গাজী আবু বকর : অগ্রণী ব্যাংক এক অভিনব জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিজেদের বন্ধকি জমির অস্তিত্ব খুজে না পেয়ে নামের মিলের কারণে রাজধানীর দক্ষিন গোড়ান, খিলগাঁওয়ে অন্যের জমি ও বাড়ি নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের নবাবপুর শাখা অভিনব এই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।এই জালিয়াতি বাস্তবায়নে অংশীদার হয়েছেন, ৮২ নং নবাবপুর রোড, ওয়ারীর বাসিন্দা মৃত আলী আহমেদ এর পুত্র বহুল আলোচিত রিয়াজ আহমেদ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যাংকের এই শাখা থেকে ঋণ নিতে মেসার্স ট্রেড ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যে ছয়টি জমি বন্ধক রেখেছিল, তার একটি মো. আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমানের। ১৬ বছরের আইনি লড়াইয়ে জিতে অগ্রণী ব্যাংক আবু বকর সিদ্দিকীর ৬০৬ খিলগাঁও এর ৬.৬ শতাংশ জমির বদলে ৩২২/১ দক্ষিন গোড়ান, খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিকের ৩.৩ শতাংশ জমির উপর নিমিত চারতলা বাড়ি নিলামে তুলে বেচে দিয়েছে। ব্যাংক বলছে, তাদের কোনো দোষ নেই। সব দোষ নিলামে ওঠা বাড়ির মালিক আর নিলাম ক্রেতার। অন্যদিকে বাড়ির মালিক আর ক্রেতা দুষছেন ব্যাংককে।উল্লেখ্য এই একই ক্রেতা সম্প্রতি ৩৬/২ কাকরাইলের এক মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রীর আড়াই কাঠা জমির উপর নিমিত ৬ তলা ভবন ভূয়া নিলাম জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় করে দখলে নিয়েছেন।জালিয়াতির বিষয় হাইকোটে প্রমানিত হওয়ায় হাইকোট নিলাম বাতিল করেছেন।হাইকোটের আদেশের বিরুদ্ধে নিলামক্রেতা সুপ্রিমকোটে আপিল করে দখল দারিত্ব বজায় রেখেছেন।

ভুক্তভোগী ৩২২/১ দক্ষিন গোড়ান, খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক আদালতে অভিযোগ দায়ের করে লিখেছেন, আদালতকে অন্ধকারে রেখে ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা, নিলাম ক্রেতা ও আদালতের নিয়োগ করা বেইলিফ (জারিকারক) বদমতলবে এই কাজ করেছেন। নিলামে বাড়ি ও জমিটি কিনেছেন ৮২ নং নবাবপুর রোড, ওয়ারীর বাসিন্দা রিয়াজ আহমেদ, পিতা-মৃত আলী আহমেদ। তিনি বলেন, তিনি টাকা দিয়েছেন। জমি বুঝিয়ে দেওয়া ব্যাংকের কাজ। তিনি এর দায় নেবেন কেন?

ঘটনাস্থলে গিয়ে এবং ব্যাংক, ভূমি নিবন্ধন অফিস ও সিটি করপোরেশনের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, আবু বকর সিদ্দিক ব্যাংকের ভুলের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই গত ৯ ডিসেম্বর আদালতের প্রতিনিধি, নিলাম ক্রেতা, পুলিশ এবং মাথায় লাল ফিতা বাঁধা শতাধিক শ্রমিক আবু বকর সিদ্দিকের বাসার দখল নেন। ভাড়াটেদের জোর করে বের করে দেন ও ভাঙচুর চালান। আশপাশের লোকজনের বাধায় পরে তাঁরা চলে যান।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি ৩৫ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সম্পদ বলতে চারতলা এই বাড়ি। দেশে ফিরে এই বাড়ির ভাড়া দিয়েই সংসার চালান। চারতলা বাড়ির ছয়টি ফ্ল্যাটে ভাড়াটে ছিল। বিনা নোটিশে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। ওই সময় তিনি বরিশালে ছিলেন।

গোলমালটা কোথায় খুঁজতে ঘটনার শিকার ব্যক্তি, ব্যাংক, ভূমি অফিস, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ ও ট্রেড ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন রুগ্ন। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহিম নিজেই নিশ্চিত করেছেন, ৩২২/১ দক্ষিন গোড়ান, খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা এই আবু বকর সিদ্দিকের কোনো জমি তাঁদের প্রতিষ্ঠানে বন্ধক ছিল না। ছিল ৬০৬ খিলগাঁও এর আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমানের ৬.৬ শতাংশ জমি। ২৪ থেকে ২৫ বছর ধরে তিনি ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পাচ্ছেন না।

ব্যাংক অবশ্য দায় স্বীকার করতে চাইছে না। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস–উল–ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নবাবপুর শাখার উপমহাব্যবস্থাপক শেখ মনিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯২ সালে মেসার্স ট্রেড ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ঋণ দেওয়ার সময় তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক মো. রুহুল আমিন ও সুবীর কুমার চক্রবর্তী যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তাঁরা অবসরপ্রাপ্ত এবং তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। নথিপত্র দেখে মনে হয়েছে, তাঁরা জমি দেখেই ঋণ দিয়েছেন।

জমি বন্ধকদাতা আবু বকর সিদ্দিকীকে খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। ব্যাংকে বন্ধক থাকা জমি ৬০৬ খিলগাঁও হোল্ডিংয়ের ৬.৬ শতাংশ। নিলামে বিক্রি হওয়া জমি ৩২২/১ দক্ষিন গোড়ান, খিলগাঁও হোল্ডিংয়ের ৩.৩ শতাংশ।

শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, ঋণ নেননি এমন একজনের জমি নিলামে তুলে বেচে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার কোম্পানি ‘গ্লোবাল সার্ভেয়ার’–এর মাধ্যমে জমি শনাক্ত করে মামলা দায়ের করে ব্যাংক। সে অনুযায়ী নোটিশ জারি ও ঢোল–শোহরত করা হয় এবং দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতের তত্ত্বাবধানে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। পরে আদালত নিলাম ক্রেতাকে জমির দখলস্বত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নেজারত শাখাকে আদেশ দেন।

তবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটিকে জমির বিপরীতে ঋণ দেওয়ার আট বছর পর ২০০০ সালে ঋণ পুনঃ তফসিল করার সময় ব্যাংক মালিকপক্ষকে জমিটির অবস্থান নিশ্চিত করতে বলেছিল। ২০০৯ সালে আবারও জমিটির অবস্থান নিশ্চিত করতে গ্লোবাল সার্ভেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি জরিপ করেছে। এরপর তা যাচাই করতে আসেন ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মাহাবুবুল হক ও ব্যবস্থাপক (ঋণ) সৈয়দ মো. রাকিবুল করিম। প্রশ্ন উঠেছে, বন্ধক থাকা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জমির বদলে ব্যাংক কেন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ জমি নিলামে বেচল?

যেখানে অসংগতি : কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৯৯২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংক নবাবপুর শাখা রপ্তানিমুখী সোয়েটার কারখানা ট্রেড ফ্যাশনকে ৪৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি কাপড় ও সুতা আমদানির জন্য ব্যাংকে ব্যাক–টু–ব্যাক ঋণপত্র বা এলসি খোলে। রপ্তানি করতে না পারায় তারা আমদানি ঋণপত্রের মূল্য শোধ করতে ব্যর্থ হয়। তখন এই অগ্রণী ব্যাংকই বিদেশে তাদের দেনা মেটায়। এরপরও দফায় দফায় প্রতিষ্ঠানটি ঋণ নেয় এবং প্রতিবারই ব্যাংকের শর্ত ভঙ্গ করে। টাকা উদ্ধারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালের পর চার দফায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের আইনি নোটিশ দেয়। সব মিলিয়ে ব্যাংকের মোট পাওনা ৯০ লাখ ৯০ হাজার ৫৬৭ টাকা। ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি মোট ছয়টি জমি বন্ধক রেখেছিল। টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ এবং ৪, ৬ ও ৮ এপ্রিল চারটি দৈনিকে পাঁচটি বন্ধকি জমি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাংক। আগ্রহী ক্রেতা না পাওয়ায় সবশেষে অগ্রণী ব্যাংক ঢাকার অর্থঋণ আদালতে অর্থঋণ মোকাদ্দমা নং-৫২৭/২০০৫ দায়ের করে। মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৬ বছরে আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমান ছাড়া পাঁচটি জমির মালিকই নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ।

অগ্রণী ব্যাংকে গচ্ছিত দলিলের অনুলিপি অনুযায়ী, আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমান, পিতা- মৃত আব্দুর রহমান হাওলাদার, সাকিণ- ৬০৬, খিলগাঁও, থানা মতিঝিল, জিলা-ঢাকা। দলিল নম্বর ২২৯৭০। ১৯ অক্টোবর ১৯৮৫ সালে জমিটি তিনি কিনেছিলেন মনোরঞ্জন দাসের কাছ থেকে। জমির পরিমাণ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। জমিটির এস এ দাগ নম্বর ২০১। সর্বশেষ ঢাকা সিটি জরিপে এ জমিটির পরিমাণ, অবস্থান কোনো কিছুই শনাক্ত করা হয়নি বলে কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, ৩২২/১ দক্ষিন গোড়ান, খিলগাঁওয়ের হাওয়াই গলির জমি ও এর ওপর চারতলা ভবনের মালিক আবু বকর সিদ্দিক, পিতা-আবুল হোসেন মৃধা, সাং-আমিরা বাদ, থানা নলছিটি, জেলা-বরিশাল।হাল সাং-২৯৭ নং দক্ষিন গোড়ান, থানা-মতিঝিল, জিলা-ঢাকা। তাঁর জমির দলিল নম্বর ৬১৪৫। জমিটি তিনি ১৯৮২ সালের ১১ অক্টোবর আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে কিনেছিলেন। জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অনুযায়ী আবু বকর সিদ্দিকের বাবার নাম দলিলে লিখিত বাবার নামের সাথে ঠিক আছে । দুটি জমির চৌহদ্দির বিবরণও আলাদা। তবে এস এ জরিপে দুটি জমিরই দাগ ২০১।

তেজগাঁওয়ের ভূমি নিবন্ধন অফিসে (রেজিস্ট্রি) দুটি দলিলই যাচাই–বাছাই করা হয়। কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, দুই জমির অবস্থান ও মালিক আলাদা।

ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী আবু বকর সিদ্দিক ঢাকার ১নং অর্থ জারী আদালতে বিচারাধীন অর্থঋণ মোকাদ্দমা নং-৫২৭/২০০৫ মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত অসংশ্লিষ্ট পক্ষ হয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে দরখাস্ত দিয়েছেন। দরখাস্তে তিনি উল্লেখ করেন, “দখলের ছদ্যাবরনে নিযুক্তীয় পুলিশ ফোর্স ও অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও নিলাম ক্রেতা কর্তৃক ভাড়াকৃত লালফিতা বাধা তিন শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী সহ সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় সম্পূর্ণ ভিন্ন দাগ খতিয়ানে ও চৌহদ্দিতে অবস্থিত অত্র দখলকারীর স্বত্ব দখলীয় বাড়ীতে মধ্যযুগীয় কায়দায় অতর্কিতে হামলা করিয়া বাড়ীতে অবস্থানরত অসুস্থ বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ ও শিশুদেরকে অস্ত্রের মুখে গ্রেফতারের ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া সকলকে জবরদস্তিমূলক ভাবে বাড়ী হইতে বাহির করিয়া দিয়া গেইট ভিতর থেকে বন্ধ করিয়া দিয়া সকল এ্যাপার্টমেন্টের আলমারী, ড্রয়ার ও ওয়ার্ডরোব ভাঙিয়া খুলিয়া মূল্যবান স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা সহ মূল্যবান সামগ্রী হাতাইয়া নিয়া প্রায় ০৪ ঘন্টা যাবৎ ভাংচুর-তান্ডব চালাইয়া দিনে দুপুরে আইন আদালতের তকমা লাগাইয়া ডিক্রীদার ব্যাংক, নিলাম ক্রেতা ও বিজ্ঞ আদালতের বেইলিফ পরস্পর যোগসাজস্ েঅত্র দরখাস্তকারী ও তাহার ভাড়াটিয়াদের প্রায় ৮৬,০০,০০০/- (ছিয়াশি লক্ষ) টাকার ক্ষতিসাধন করিয়া সাধারণ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে দখল কার্যক্রম স্থগিত করিয়া চলিয়া যাইতে বাধ্য হয়। বিষয়টি দেশের শীর্ষ স্থানীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়। দরখাস্তকারী সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষনা করিতেছেন যে, তিনি অত্র মোকদ্দমার ১৬ নং দায়িক নন। অত্র মোকদ্দমার “ঘ” তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি ও তাহার মালিকানাধীন সম্পত্তি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অত্র দরখাস্তকারী উল্লেখিত অনভিপ্রেত ঘটনার সময় অকুস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, বরিশালে অবস্থান করিতেছিলেন। তাহার বাড়ীতে অবস্থানরত ভাড়াটিয়ারা হামলাকারীদের বহু অনুরোধ, উপরোধ করিলেও তাহা অরন্য রোদনে পর্যবশিত হয়।”

আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমান কে? : অগ্রণী ব্যাংকে আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমানের কোনো ছবি নেই। তাঁর সঙ্গে ট্রেড ফ্যাশনের মালিকানা বা অংশীদারত্বের সম্পর্কও ছিল না। ব্যাংক বলছে, সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকায় তাঁরা আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমানের কোনো ছবি রাখেননি। তাঁরা শুধু জানেন, সিদ্দিকীর ঠিকানা ৬০৬ খিলগাঁও। তাঁর কোনো স্থায়ী ঠিকানার উল্লেখ নেই কাগজপত্রে। তাঁকে ব্যাংকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক মো. আকরাম হোসেন খান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬০৬ নামে কোনো হোল্ডিং নম্বর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নেই। তবে ৬০৬/১ আছে। এই হোল্ডিং নম্বরে আছেন কাজী আমিনুল ইসলাম নামের এক চিকিৎসক। তাঁর সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমানের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই প্রতিবেদক ট্রেড ফ্যাশনের সাবেক পরিচালক মো. আকরাম হোসেন খানের ছেলে মিনহাজ হোসেনকে খুঁজে পেয়েছে। মিনহাজ বলেন, ১৯৯৪ সালে তাঁর বাবা মারা যান। তিনি তখন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলেন। বড় ছেলে হওয়ায় লেখাপড়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। প্রথম প্রথম ট্রেড ফ্যাশনে যেতেন। ওই সময় আবু বকর সিদ্দিকী নামের এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে আসতেন, টাকা নিয়ে যেতেন। তবে ২০ বছরে তিনি আর ওই ব্যক্তিকে দেখেননি।

আর ট্রেড ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, তাঁর যত দূর মনে পড়ছে, আবু বকর সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকুর রহমান কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতেন না। তিনি নিজেকে অনেক ভূসম্পত্তির মালিক বলে দাবি করতেন। প্রতিষ্ঠানটির এক সময়কার পরিচালক আকরাম হোসেন খান তাঁর জমির দলিল দেখিয়েই পরিচালকের পদ পেয়েছিলেন।

এদিকে, ব্যাংক কর্মকর্তারা এখন অন্য কথা বলছেন। তাঁরা বলেন, মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে তাঁরা আবু বকর সিদ্দিকের বাসায় গিয়েছিলেন। তাঁর বাবার নাম জানতে চাইলে তিনি উল্টো জিজ্ঞেস করেন, কেন শুধু শুধু অচেনা লোককে তিনি বাবার নাম বলবেন।

জমি বন্ধক নেওয়ার আগে জমি ও জমির মালিকের অস্তিত্ব আছে কি না খোঁজ নেননি? এ প্রশ্নের জবাবে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শেখ মনির বলেন, ‘বন্ধক নিলে তো দেখার কথা। নিশ্চয়ই দেখা হয়েছিল।’ তাহলে সেই জমি ভোজবাজির মতো কোথায় মিলিয়ে গেল, তার জবাব শেখ মনির দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করা আইনজীবী ইমাম হোসেন তারেক বলেন, এটা পরিষ্কার জালিয়াতি। জমি বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাংকের বেশ কিছু বিষয় যাচাই–বাছাইয়ের বাধ্যবাধকতা আছে। এ ঘটনায় ব্যাংক কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।

Share