দীর্ঘসূত্রতার কারণে গৃহায়নের প্রকল্পের টাকা ফেরত নিল বিশ্বব্যাংক

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প থেকে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার ফেরত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই কারণে ‘স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উন্নত জীবন ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রকল্পটির একটি অংশ বাদ দিয়েই এখন বাস্তবায়ন করতে চায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এজন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৯টি কমিউনিটির জন্য কয়েকটি ধাপে অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা ছিল। ২০১৬ সালে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ৩০৪ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি প্রথমে ২০২০ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় দুবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সংশোধনে চলতি ডিসেম্বরে শেষ করার কথা। কিন্তু সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছে। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংক বাড়তি সময়ে অর্থায়ন করতে রাজি নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করার জন্য বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। প্রকল্পে ২৪৫ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, যা প্রকল্প মোট ব্যয়ের ৮০ ভাগের বেশি।

অন্যদিকে, প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় কেনাকাটা কেন্দ্রীয়ভাবে করার শর্তে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করে। কিন্তু বাস্তবায়নের একপর্যায়ে এসে নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা নারায়ণঞ্জ সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থায় করতে চায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তাতেও রাজি হয়নি। ফলে এ প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে যে দুটি কমিউনিটি উন্নয়নের পরিকল্পনা ছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ যে সময়মতো সব অর্থ ব্যয় করতে পারবে না, তা বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনায় আগেই উঠে এসেছিল। সে অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক ২০২১ সালের মার্চে ব্যয়যোগ্য নয়—এমন ৬০ লাখ ডলার প্রকল্প তহবিল বাতিল করার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। পরবর্তী সময়ে প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন কমিটি (পিআইসি) এবং প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সম্মতিতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৬০ লাখ ডলার প্রত্যাহারসহ ‘সংশোধিত আর্থিক চুক্তি’ সই হয়।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াসিফ আহমাদ বলেন, কারও গাফিলতির কারণে এটা হয়নি। প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ এক বছর দেরি হওয়া এবং এ ধরনের প্রকল্প প্রথম হওয়ায় অভিজ্ঞতারও অভাব ছিল। এসব কারণেই মূলত প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের টাকা প্রত্যাহার এবং নারায়ণগঞ্জের কাজ না হওয়ায় ব্যয় কমিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

প্রকল্প থেকে নারায়ণগঞ্জ বাদ যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রকল্পের কেনাকাটা কেন্দ্রীয়ভাবে না করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিজেরা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে সম্মতি দেয়নি।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নির্ধারিত মেয়াদের আগে প্রকল্পের বাকি কাজ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের মতো অধিক ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যার এলাকায় কমিউনিটি মোবিলাইজেশন, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ইত্যাদি কাজের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। এজন্য নারায়ণগঞ্জে কাজ ফের শুরু না করার সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের র‍্যালিকুঠি জমির মালিকানা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের কিছু অংশ বাদ দিতে হয়। সুতরাং, প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে সিরাজগঞ্জে ১২টি এবং কুমিল্লায় ৫টিসহ মোট ১৭টি কমিউনিটি বা বসতির উন্নয়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প সংশোধন প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালে শুরুর পর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ৫৫ শতাংশ ভৌত কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর অর্থ ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের উদ্দেশ্য পৌরসভা বা নগর এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমান এবং অনানুষ্ঠানিক সেটেলমেন্টের মান উন্নয়ন। প্রকল্প এলাকার পৌরসভা বা নগরের পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যুৎ -গ্যাস এবং পয়ঃব্যবস্থাপন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে।

Share